ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রের্কড, নারী মৃত্যুহার বেশি

পরিস্থিতি প্রতিবেদন- ২২ ১৯ জুলাই ২০২৩

১৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ১৮ জুলাই ২০২৩ সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এটি চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এই বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ও যতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা এর আগে কোনো বছরের প্রথম সাত মাসে হয়নি। চলতি বছরের এই সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট ১২৭ জন মারা গেলেন এবং আক্রান্তে সংখ্যা ২৪ হাজার। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসের ১-১৮ তারিখ পর্যন্ত (সকাল ৮টা) ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যুর হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আক্রান্ত বেশী পুরুষ কিন্তু নারী মৃত্যুহার বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ জন, ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৭ জন, শূন্য থেকে ৫ বছরের মধ্যে ৬ জন অর্থাৎ মোট মৃত্যু প্রায় ২২% শিশু যাদের বয়স ০-১৮ বছর। এছাড়া ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আক্রান্তের মধ্যে ১১ হাজার ৯৮৪ জনের বয়সসীমা এই গ্রুপে। এই বয়সসীমায় মারা গেছেন ৫৩ জন। ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন ২৯ জন এবং ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন ১৫ জন, ও ৮০ বছরের উপরে ২ জন।  আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের চেয়ে বেশি হলেও মারা গেছেন বেশি নারীরা। মোট ১২৭ জনের মধ্যে ৭৩ জন নারী এবং ৫৪ জন পুরুষ অর্থাৎ পুরুষ অনুপাতে দ্বিগুণের বেশী নারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। যা বেশ আশংকাজনক।

দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান ২০২২ সালে, ২৮১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। চলতি বছরের এই সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট ১২৭ জন মারা গেলেন এবং আক্রান্তে সংখ্যা ২৪ হাজার যা বেশ আশংকার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণাসহ সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিজেরা সচেতন হওয়া সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিকতার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। সর্বোচ্চ সতর্কতায় এই পরিস্থিতি মোকাবেলা সহজ করে দিবে।

পরিবারের যে কেউই জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিশুরা শিশুরা ডেঙ্গুর আলামত বা শারীরিক অসুবিধার কথাগুলি ঠিকমতো জানাতে পারে না তাই শিশুদের জটিলতার হার বেশি। শিশুরা খুব সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন। যখনই ঘুমাবে  অবশ্যই মশারি দিতে হবে। শিশুদের অবশ্যই ফুলহাতা কাপড় পরাতে হবে। বাড়িতে ও স্কুলে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর জ্বর হলে প্রথম দিনেই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। বাড়িতে নানান ধরনের পানীয় ও তরল খাবার তৈরি করে শিশুদের অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াতে হবে। বাজারে পাওয়া যায় এমন পানীয় বা জুস বিশেষ করে এনার্জী ড্রিংক একবারেই দেয়া যাবে না।  স্যালাইন পানি খাওয়ানোর সময় অবশ্যই স্যালাইন পানি বানানো ও খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি দেখে নিতে হবে। https://disasterforum.org/%e0%a6%a1%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%af%e0%a7%87-%e0%a6%ad%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%8b-%e0%a6%ac/ । তা নাহলে ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে। যেসব শিশু মায়ের দুধ খায়, তাদের মায়ের দুধ দিতে হবে বারবার। যেকোনো বয়সী শিশু যদি মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খেতে না পারে, তাহলে হাসপাতালে নিয়ে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাছাড়া শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়লে বা অতিরিক্ত ছটফট করলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে কিংবা অন্য কোনো বিপদচিহ্ন দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিন। পাতলা পায়খানা বা কোষ্টকাঠিন্য হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। অনেকেরই দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনি রোগ, লিভারের রোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর হলে একেবারেই অবহেলা করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যারা এই ধরনের দীর্ঘ মেযাদী রোগে আক্রান্ত এই সময় তাদের কোন কোন ঔষুধ নিরাপদ নাও হতে পারে তাই কোন ওষুধ চালানো যাবে, আর কোনটা যাবে না, কতটা পানি এবং লবণ গ্রহণ করতে পারবেন, তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই নিরাপদ। যাদের কিডনী কিংবা হার্টের সমস্যা পটাশিয়াম সংক্রান্ত রোগের জটিলতা আছে তারা কতটা পানি বা লবণ গ্রহণ করতে পারবে, এমনকি ডাবের পানি কতটুকু খাবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিবে। গর্ভবতী মা ও শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং এই সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত নয় ।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। বাড়িতে ও বাড়ির আশপাশে এবং স্কুল, অফিস কোথাও পানি জমে থাকতে দেবেন না। তা সেই পানি পরিষ্কারই হোক আর অপরিষ্কারই হোক। মশা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য অনেকে এখন মশার কয়েল ব্যবহার করছে। মশার কয়েল শিশুদের নাগালের বাইরে রাখাসহ বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় মশার কয়েল থেকে আগুন লাগার ঝুঁকিসহ নানা ধরনের বিপদের আর্শংকা থাকে।

এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও ডেঙ্গু হলে করনীয় এবং ডেঙ্গুতে শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন

ডেঙ্গুতে শিশু সুরক্ষা
অন্যান্য বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে
শিশুর ডেঙ্গু যেভাবে বোঝা যায়

Leave a Reply